বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

খুলনা ওয়াসায় ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহ, কিছুই কি করার নেই?

এস.এম. সাঈদুর রহমান সোহেল, খুলনা ব্যুরো:

‘খুলনা ওয়াসার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। নিয়মিত পানির বিল নিলেও সরবরাহকৃত পানি দুর্গন্ধ কাঁদা এবং ময়লায় পরিপূর্ণ। একাধিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে একাধিকবার রিপোর্ট হলেও টনক নড়ছে না ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। খুলনার শুধী সমাজের কাছে তাই বাধ্য হয়েই আমার অভিযোগ। কিছুই কি করার নেই’। এ মন্তব্য খুলনা ওয়াসার একজন গ্রাহকের। অ্যাডভোকেট মাসুম বিল্লাহ নামের এই গ্রাহক খুলনা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে এতোটাই তিক্ত-বিরক্ত যে, তিনি ময়লা পানিযুক্ত ছবিসহ উল্লিখিত মন্তব্য তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

গ্রাহক মাসুম বিল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে ওয়াসাকে আইনি নোটিশ করা হবে। তাতেও কাজ না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে, একই সমস্যার সম্মুখিন অন্যান্য গ্রাহকরাও তার পোষ্টে ওয়াসা সম্পর্কে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, করেছেন নানা নেতিবাচক মন্তব্যও।

যার কয়েকটি মন্তব্য দৈনিক ই-কণ্ঠ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

আবু সাদাত আহমেদ রাজ নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘বহু বার বলা সত্যেও কোনো কাজ হয়না, মাইরের বিকল্প নেই, ওয়াসার চেয়ারম্যানের বাড়ি গিয়ে ভালো পানি পেলে ধরে মাইর, নাহলে ওনাকে এনে ওই পানি দিয়ে গোসল করিয়ে সাদা সার্ট পরিয়ে বের করে দিতে হবে তখন বুঝবেন, তার আগে না।’

মোস্তফা আল মামুন প্রবালের মন্তব্য, ‘শরবত কর্মসূচির বিকল্প নাই’, লিমন হোসাইন মন্তব্য করেছেন, ‘করার আছে অনেক কিছুই, সমস্যা আমাদের যারা সেবা গ্রহণ করি। আমরা সঠিক সময়ে সঠিক প্রতিবাদটুকু করিনা। ওয়াসাতে সবাই মিলে প্রথমে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। তারপর ২ দিনের মধ্যে কাজ না হলে আদালতে মামলা করতে হবে এবং পত্রিকায় কর্মকর্তার নামসহ প্রকাশ করতে হবে, যা পরে আদালতে কাজে আসবে এবং সর্বপরি এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে ঘেরাও করতে হবে। ২ নম্বরি জীবনে অনেক করেছে এখন আর না’।

ওয়াসার ময়লাযুক্ত পানি দেখে রোকেয়া রহমান নামে একজন নারীর মন্তব্য, ‘এ দেখি খেজুরের রস’, এম রফিকুল ইসলাম নামে অপর ব্যক্তি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ জানাচ্ছি- বলে মন্তব্য করেন। পুলক রায় ‘এইটা পানি না জুস’ বলে প্রশ্ন ছুড়েছেন। ইভান ইমরান মন্তব্য করেছেন, ‘লেবু আর ইউসুপগুলের ভূসি মিশ্রিত সুপেয় সরবত কে তুমি ময়লা বলছো’।

মাহমুদুল হাসান সুমন নামে অপর একজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, ‘আমার বাসায় ও একই অবস্থা, আবার নতুন সমস্যা পানি ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না’। এপিসি নোমানের মন্তব্য, ‘ওয়াসার পানি বোতলজাত করার পরে দেখে মনে হয় খুলনা ওয়াসা স্যানিটিলাইজার সাপ্লাই দিচ্ছে’।
আরিফা কুইন প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এইটা আমারও জানার ইচ্ছা, কিছুই কি করার নেই’, রহমান এফজেড মন্তব্য করেছেন, ‘মনে হয় এর মধ্যে খনিজ পদার্থ আছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী’, প্রিন্স হোসাইন সাজ্জাদের মন্তব্য, ‘এর জন্য আমাদের ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ার, প্যানেল মেয়র, কমিশনারগলকে থাইল্যা- ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে হবে সেখান থেকে পুকুর খনন শিখে আসবে।’

মনিরুল ইসলাম পান্না নামে একজন অ্যাডভোকেট মন্তব্য করেন, ‘বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে, বিল করলেও তো কথা ছিলো, খোজ নিয়ে দেখেন সে বিলটাও বাড়তি বিল, আমার বাড়ির বিলে ঘটেছে। জনপ্রতিনধীরর কথা বলবেন, এটাতো হযরত ওমরের শাষণ আমল না, হযরত ওমর (রাঃ) কেদে ছিলেন এজন্য যে ফোরাত নদীর তীরে একটু কুকুর মারা গেলেও তার জন্য আমাকে জবাব দিতে হবে, যেখানে পানি ব্যবহার অনুপযোগী সেখানে কেন বিল দিতে হবে, এ বিচার আল্লাহ উপর থাকলো।’ রেজাউল আমিনের মন্তব্য, ‘২৬শ’ কোটি টাকার দামি পানি এরকম রং তো হবেই।’

নাগরিক নেতা এসএম সোহরাব হোসেন মন্তব্য করেন, খুলনাবাসীর দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফসল খুলনা ওয়াসা। জনগণের টাকায় ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি ও অসহনীয় ভোগান্তির পর বিগ বাজেট প্রকল্পের সুপেয় পানির পরিবর্তে লবণাক্ত, নোংরা, ময়লা ও আয়রণযুক্ত ব্যবহার অনুপযোগী পানি নগরবাসীকে উপহার দিয়েই প্রতিমাসে টাকা আদায়ে ব্যস্ত কর্তারা। এই অন্যায়, অবিবেচনা প্রসূত কাজ মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবাদ- কর্মসূচিতে থাকে না নগরবাসীর অংশগ্রহণ। জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দের গাঁ ছাড়া ভাব। এতে ওয়াসার দায়িত্বশীলদের থাকে না মাথাব্যথা। সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই পারে ওয়াসার অনিয়ম রুখতে। এখন প্রয়োজন যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্বভাবে প্রতিবাদ করা। করোনাকালের কর্মসূচি গ্রহণ ও সফলে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনাও করেন প্রাণি প্রেমী এস এম সোহরাব হোসেন।
মনির হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী এ জন্য ওয়াসার চেয়ারম্যানকে সর্ব প্রথম দায়ী করেন। সালমা জাহানের মন্তব্য, ‘পানির এক নাম জীবন! বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তি গ্রাহকদের ন্যায্য অধিকার। এত খোঁড়াখুঁড়ি করে জন জীবন দুর্বিষহ করে তার রেজাল্ট এই। এর সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শনাপূর্বক দ্রুত সমাধান দাবি করছি। অন্যথায় এ আন্দোলনকে জোরদার গতিশীল করে তুলতে হবে।’

এদিকে ঘোলা ও ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহের বিষয়টি স্বীকার করে খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক-ডিএমডি কামাল উদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ১ জুলাই নগরীর বসুপাড়া এলাকায় বিটিসিএল’র টেলিফোন লাইনে কাজ করতে গিয়ে ওয়াসার মূল লাইনের পাইপ ফাঁটিয়ে ফেলেছে। এ কারণে ওই স্পট থেকে পানিতে কাঁদা মাটি প্রবেশ করেছে। এ কারণে তিন দিন ধরে ২/৩টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার গ্রাহক ঘোলা পানি পেয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে শুক্রবার (৩ জুলাই) দুপুর নাগাদ পাইপটি মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। শনিবার থেকে গ্রাহকরা পারিস্কার পানি পাবেন বলেও আশা করেন তিনি। তবে, রাস্তা খোঁড়ার আগে বিটিসিএল ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ওয়াসা খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। মোল্লাহাটের মধুমতি নদীর পানি রূপসা নদীর তলদেশ থেকে পাইপ লাইনে এনে নগরীর গ্রাহকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এ প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং কাযকারিতা নিয়ে শুরু থেকে নানা প্রশ্ন রয়েছে নগরবাসীর।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com